রাকিবের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলেন চাকরির খোঁজের জন্য।
কিন্তু করোনার মহামারি কারণে চাকরি না হওয়ায় সেখানে থাকতে খুব একটা ভালো লাগছিলো না তাও নয়। তারপরও গ্রাম থেকে বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে কোনোভাবে চলছিলো।
কিন্তু লকডাউন আর ঈদের কারণে সেখানে থাকাটাই যখন অযথা মনে করেছেন, তখনই ব্যাগটি কাঁধে তুলে যাত্রা শুরু করেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। তবে, দূরপাল্লার পরিবহন না চলাচল করায় দ্বিগুনেরও বেশি সময় ব্যয় করে চরম দুর্ভোগ মেনেই তাকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে হয়।
এই প্রতিবেদকের সাথে রাকিবের কথা হলে তিনি জানান, সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে মাওয়া ঘাটে গিয়ে। প্রচুর মানুষ তার ওপর নদী পার হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
যে যার মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছেন পদ্মা পার হওয়ার, কিন্তু সবাইকে ফেরিতেই পার হতে দেখেছেন তিনি।তিনি বলেন, ফেরিতে পদ্মা পার হতে গিয়ে করোনা বলতে যে কিছু আছে তাই তো মনে হয়নি, যে যার মতো করে গাদাগাদি করে ফেরিতে রয়েছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, যার ইচ্ছে হয়েছে মাস্ক পরেছেন, যার হয়নি পরেননি। যারা পরেননি তাদের কেউ বলেনিও মাস্ক পরার জন্য। এরপর এপাড়ে এসে অনেক কষ্ট করে একটি থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা) এ বরিশালের কয়েকজনের সঙ্গে উঠে পড়ি। তবে, পথে আসতে আসতে দেখেছি অনেকেই আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি পিকআপ-ট্রাকেও উঠে আসছেন।
বরিশালেরর নথুল্লাবাদ বাস-টার্মিনালে কথা হয় পটুয়াখালীগামী একটি পিকআপের চালক মাসুদের সঙ্গে। যার পিকআপে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষ যাত্রী হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, মানুষ আসতে চাইলে কি-ই বা করার আছে। আর খালি আসার থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে আসায় ঈদের আগে কিছুটা বাড়তি আয় তো হলো। বাড়তি আয় তেমন একটা নেই, পথে পথে প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে টাকা দিয়েই যাত্রীদের নিয়ে মাওয়া থেকে এতটা পথে এসেছি।
তবে যাত্রীরা বলছেন, পিকআপ-ট্রাকে চড়ে দুর্ভোগের মধ্যেও প্রয়োজনের তাগিদেই তারা বাড়িতে ফিরছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন ভাড়া। বরিশাল থেকে মাওয়ার বাস ভাড়া ৩শ টাকা হলেও এখন মাহিন্দ্রাতেই সেই ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৬শ টাকা। আর ভেঙে ভেঙে যারা আসছেন তারা খরচের হিসাবটা আরো বেশি হয়েছে।বুধবার (১২ মে) বিকেলে বরিশাল নগরের প্রবেশদ্বার গরিয়ারপাড়ে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, যে যেভাবে যে যানবাহনে পারছেন নগরমুখী যাচ্ছেন। তবে এরমধ্যে বেশিরভাগ লোকই বরিশালসহ বিভাগের ৫ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। যাদের মধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি। মাঝেমধ্যে কিছু অ্যাম্বুলেন্সের দেখা মিলে যেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মানুষও রয়েছে। এর বাইরে বাস, পিকআপ, ট্রাক, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের থ্রি-হুইলার যাত্রীরা বোঝাই হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এদের কারোরই স্বাস্থ্যবিধি মানার যেমন কোনো বালাই নেই। তেমনি সড়কজুড়ে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি।
আর প্রশাসনিক তৎপরতা তেমন একটা না থাকায় যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে চলাচল করছে। বেপরোয়া গতির কারণে বুধবার সকালে বরিশালের গৌরনদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় থ্রি-হুইলারের যাত্রী দুই জন পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যারা চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে যাচ্ছিলেন। এছাড়া ভোরে অন্ধকারের মধ্যেই বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাটে ঘাটে দুটো ট্রলারের সংঘর্ষ হয়। যেসময় কয়েকজন ঘরমুখো ট্রলারের যাত্রী ও তাদের বহনকারী দুটি মোটরসাইকেল নদীতে পরে যায়। তবে যাত্রীরা সাঁতরে নদী তীরে উঠে গেলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে আজ পদ্মানদী পার হতে গিয়ে রোরো ফেরিতে উঠে প্রচণ্ড গরমে বেশকিছু যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছালে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন হয়ে চলাচল করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেসঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনার সংক্রমণরোধে নগরের অভ্যন্তরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।