পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবায় সয়লাব গোটা দেশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও নিত্যনতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করে আসছে চোরাকারবারিরা। এর কারবার এখন দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মাদক কারবারিরা এখন ইয়াবা পাচার করছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে।
যাত্রীর লাগেজে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান ধরা পড়ার পর তারা এখন বেছে নিয়েছে কুরিয়ার সার্ভিস। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত এক মাসে জব্দ করা হয়েছে ইয়াবার তিনটি চালান। সর্বশেষ গত ১৯ মে বুধবার রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগের একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।
এ ঘটনায় ডাক বিভাগের চার কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্বরত পরিদর্শক আসাদুল ইসলাম সালাম বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ১৯ মে বুধবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেটে পোস্ট অফিসের মালামাল স্ক্যানিংকালে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির স্ক্যানার সুলতান মাহমুদ ব্যাগের ভেতর ইয়াবা শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে স্কোয়াড্রন লিডার আশেকিন ও ফারিহা এবং এএসপি আনিতা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবার এ চালানটি জব্দ করেন। এ সময় ডাক বিভাগের চার কর্মচারীকে আটক করে পরে তাদেরকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিমানবন্দর প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো অঞ্চল (উত্তর) বিভাগের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, এ নিয়ে গত এক মাসে ইয়াবার তিনটি চালান জব্দ করা হয়। তিনি বলেন, এর আগে দুটি চালানের গন্তব্য ছিল নিউ ইয়র্ক। আর বুধবার আটককৃত চালানটির গন্তব্য ছিল সৌদি আরবের রিয়াদ, তবে ট্রানজিট ছিল দুবাই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বিমানবন্দর থেকে আমরা ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল সিডোঅ্যাফিড্রিনের একটি বড় চালান জব্দ করেছিলাম। এর সঙ্গে জড়িতদের আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি। আর ঐ ঘটনার পরই আমরা বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি।
তাদেরকে (কুরিয়ার সার্ভিস) আমরা পার্সেল প্রেরণকারীদের এনআইডির (জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রাখা) আওতায় আনতে বলেছি। আর এনআইডি বাধ্যতামূলক করায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার অনেকটা কমেছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগ এখনো এনআইডি বাধ্যতামূলক করেনি। ফলে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে মাদক কারবারিরা। অবশ্য ডাক বিভাগ মাদক পাচারের পার্সেল জব্দ করার ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন সময়ে সহায়তা করেছে।
মেহেদী হাসান বলেন, পার্সেলের মাধ্যমে মাদক পাচার রোধ করতে হলে পার্সেল বুক করার সময় প্রেরকের ছবি ওয়েবক্যামে ধারণ করতে ও ফিঙ্গার প্রিন্ট রাখতে হবে। বিমানবন্দরে ইয়াবা চালানসহ চার ডাক কর্মীকে আটকের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। এর পেছনে কারা জড়িত তাদেরকে ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে পার্সেলটি পাঠানো হয়েছিল গাজীপুর থেকে। গ্রেফতারকৃত চার ডাক কর্মীকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ থেকে সৌদি আরবে পাচারের জন্য ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছিল বিমানবন্দরের কাস্টমস ও অ্যাভসেক সদস্যরা। নিরাপত্তা স্ক্যানিংয়ের সময় মাদকগুলো ধরা পড়ে। গত ৮ ডিসেম্বর ডাকযোগে পাচারের সময় ২ হাজার ৪০ পিস ইয়াবা জব্দ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। জিপিও কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে পার্সেলটি খোলা হয়। পার্সেলের মধ্যে দুটি জিন্স প্যান্টের কোমরের ফাঁকা জায়গায় এবং লেগ হোলের সেলাইয়ের ভেতর ফাঁকা জায়গায় পলিথিন দিয়ে অভিনব পন্থায় প্যাকিং করা অবস্থায় ইয়াবাগুলো জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছিল, পার্সেলটির গন্তব্য ছিল আমেরিকার নিউ ইয়র্ক। এ ঘটনায় খিলগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল নাহিদ পারভেজ তাহিন, মিজানুর রহমান জুয়েল, এনাম হোসেন খান রাহাত ও রাজিব হাওলাদার নামে চার মাদক কারবারিকে। গত বছর ১৮ আগস্ট র্যাব-১-এর একটি টিম উত্তরা পশ্চিম থানাধীন একটি আবাসিক এলাকা থেকে নাসির উদ্দিন সরকার নামে এক ইয়াবা কারবারিকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে আচারের দুটি বয়ামে বিশেষ কায়দায় রাখা ২৬ হাজার ২০ পিস ইয়াবা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নাসির জানিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সে ইয়াবার চালান পাঠায়।
সূত্র: ইত্তেফাক