বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
add

ফুটপাতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নতুন টাকা, মিলছে না ব্যাংকে

বিশেষ প্রতিনিধি / ২১৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১
add

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার। ঝকঝকে-চকচকে বিভিন্ন অংকের এসব নোট কিনতে সাধারণ মানুষ ভীড় করছেন মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে।

ছোটদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ঈদে সালামির জন্য কড়কড়ে ২ টাকা ৫ টাকা ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ টাকার নতুন নোট কিনছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতারা। তবে এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে এই টাকার বাজারে যোগ হয়েছে ২০০ টাকার নোট, চাহিদাও রয়েছে ক্রেতাদের।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নতুন ৫ টাকার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ৫ টাকার একটি নতুন নোটের দাম পড়ছে সাড়ে ৬ টাকা। ৫ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। ২ টাকার ১০০ নোটের বান্ডিল মিলছে ২৮০ টাকায়। ১০ টাকার ১০০টি নোটের বান্ডিল পড়ছে ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকা। ৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডিলে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

এসব নতুন টাকার ব্যবসা আইন সিদ্ধ না হলেও রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে। অবৈধ এই ব্যবসা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি বিক্রেতারা। তবে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পরেও মিলছে না নতুন টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েও নতুন টাকা সংগ্রহ করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।

শফিকুল ইসলাম কান্ত নামে এক গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকার জন্য গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখন কিছুই করার নাই। ব্যাংকে গিয়েছি, সেখানে সিকিউরিটি গার্ড বললো ব্যাংকে নতুন কোনো টাকাই নেই, গত বছরও ছিলো না, পরে বাধ্য হয়ে চলে আসলাম।

তিনি বলেন, এটাও একটি আনন্দ, নতুন জামা কাপড়ের পাশাপাশি ছোটদের নতুন টাকা দিয়ে একটু বাড়তি আনন্দ দিতে চান, তাই ১০ টাকার একটি বান্ডিল কিনেছেন ১২০ টাকা দিয়ে। বাধ্য হয়ে বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, কিন্তু এভাবে তো আমাদের কেনার কথা নয়, আমরা ব্যাংকে যাবো, ব্যাংক থেকে নেবো, এটাই হওয়া উচিত ছিলো। কেন্দ্রীয় বংকের মতো একটি ব্যাংকের সামনে ওপেনলি টাকা বিক্রি হচ্ছে। যারা বিক্রি করছেন তারা এই টাকা পাচ্ছে কোথায়? তারা এই টাকা কোথা থেকে আনছেন, নিশ্চয়ই ব্যাংক থেকেই। এখানে আসলে বুঝে নিতে হবে ইন্টারনালভাবে তাদের সাথে কোন লিয়াজোঁ আছে, সেখানে থেকে তারা নিয়ে এসে ফুটপাতে বিক্রি করছে। ফুটপাতে বিক্রেতারা টাকা পাচ্ছেন অথচ আমরা সাধারণ জনগণ তা পাচ্ছি না। বুঝে নিতে হবে এখানে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে।

সামনে ঈদ আসছে তাই নতুন টাকা সংগ্রহ করতে এসেছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় দশ টাকা করে পেতাম। এখনও ছোটদেরকে দশ টাকা, বিশ টাকার নতুন নোট দিলে তারা খুশি হয়। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছি। কিন্তু ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে নতুন টাকা নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাত থেকে বেশি দামে টাকা কিনতে হয়েছে। বাচ্চদের খুশি করার জন্য দাম যাই হোক কিনেছি।

৬০ বছরের এক বৃদ্ধ নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল ১১টা থেকে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো সিরিয়াল পাচ্ছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে যারা টাকা নিচ্ছেন তারা কেউ স্লিপ দিয়ে যে যেভাবে পারছেন সে ভাবে নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তাদরেকে অনুরোধ করেছি আমাকে একটা দশ টাকা, একটা বিশ টাকার বান্ডিল দেওয়ার জন্য, তারা দিলেন না।

তিনি বলেন, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি টাকাও নেই। তারা আমাকে বলছে আপনি চলে যান। পরে বাংলাদেশে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ১০০ টাকা চেয়েছেন, টাকা দিলে তাকে দুইটা বান্ডিল দিতে হবে। তবে নাম জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে রাজি হননি। বলেন, পৃথিবীর কোথায় নতুন টাকার বাজার বসে না,  কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে নতুন টাকার বাজার কেন বসছে, এটা আমার জিজ্ঞাসা এবং এটা নিরসনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ আহ্বান জানাই।

এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে ফুটপাতে নতুন টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পেয়ে নতুন টাকার নোট ফুটপাত থেকে সংগ্রহ বাধ্য হচ্ছি।

এর আগে মঙ্গলবার (৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সর্বসাধারণের মাঝে নতুন টাকা বিনিময় বন্ধ রাখলেও এবার তিন মাসে বাজারে মোট ১৪ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এরমধ্যে বাজারে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট এসেছে। ব্যাংগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাকি ৮ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই মার্কেটে চলে আসবে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহ করার সব প্রস্তুতিও রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

তিনি আরও বলেন, এই বছর এসব নতুন নোট সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ শুরু হওয়ার আগ থেকেই বাজারে ছাড়া শুরু হয়েছে। নতুন নোট বাজারে ছাড়লেও করোনার বিধি-নিষেধের কারণে আগের মতো জনসাধারণের কাছে নোট বিনিময় করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে এই টাকা পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি।

add

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

বাংলাদেশে কোরোনা

সর্বশেষ (গত ২৪ ঘন্টার রিপোর্ট)
আক্রান্ত
মৃত্যু
সুস্থ
পরীক্ষা
সর্বমোট