বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব পূর্নিমার জোয়ারে বরগুনার তিনটি নদীর পানির বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে হয়েছে। এতে বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জোয়ারের পানির তোড়ে বেশ কিছু এলাকার নাজুক বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও নিম্নাঞ্চলের বাঁধের বাইরের বাসিন্দাদের ঘর-বাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী, ডালভাঙা ও নলী এলাকা, নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, সোনাতল ও কুমিড়মারা, বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া, বাঁশবুনিয়া, চালিতাতলী, আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন, বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি, কুমড়াখালী ও গুলিশাখালী এলাকা, পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জীনতলা, টেংরা, কালমেঘা, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ছোটবগী, নিদ্রার চর, তেতুলবাড়িয়া, খোট্টার চর, সোনাকাটা, নিউপাড়া, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, গুলিশাখালী, বামনা উপজেলার রামনা, বদনীখালী, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি, ঝিলবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া এলাকাসহ জেলার বেশ কিছু স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বাঁধ ভেঙে ও উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও ওইসব এলাকার বাঁধের বাইরের প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে মহা দূর্ভোগে পড়েছেন ওইসব ঘরবাড়ির বাসিন্দারা।
পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ভাঙন ও উচ্চ জোয়ারের জেলার ২৯ কিলোমিটারজুড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিলীনের মুখে পড়েছে। বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় উচ্চ জোয়ার,ঝড় বন্যায়ও প্রবল বর্ষণে ভাঙন কবলিত স্থান দিয়ে লোকালয় পানি ঢুকে প্লাবিত হয় ঘর বাড়ি ও জমির ফসল নষ্ট হওয়ার অশঙ্কা করছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় জেলায় ২১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সব সংস্কার করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বরগুনার তিনটি পয়েন্টে জোয়ারের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে বিষখালী নদীর পাথরঘাটা পয়েন্টে পানির স্বাভাবিক উচ্চতা ২.৮৫ সে.মি. যা বিপদ সীমার ৩.৯৩ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও বিষখালী নদীর বেতাগী পয়েন্টে স্বাভাবিক উচ্চতা ২.৬৬ সে. মি. যা বিপদ সীমার ২.৭৭ উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বামনা উপজেলায় স্বাভাবিক উচ্চতা ২.৩৩ যা ৩.৭৫ উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, উচ্চ জোয়ারের চাপে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে বেরিবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে যা তাৎক্ষনিকভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব মোকাবেলায় জরুরী প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় জেলায় ৬৪২ টি আশ্রয়ন প্রকল্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১ কোটি ২১ টাকা নগদ অর্থসহ ৬ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৩৫৭ মেট্রিকটন চাল মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৪৪ টি মেডিকেল টিম ও রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি এবং স্থানীয় ৭ হাজার ৫শ সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ইয়াস মোকাবেলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরগুনার ৬৪২ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীসহ রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের সেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।