চট্টগ্রাম: বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ আমদানি-রফতানির চাপের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে বন্দরকে।
এরই অংশ হিসেবে নতুন নতুন অবকাঠামো, জেটি, টার্মিনাল নির্মাণ, আধুনিক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ, জাহাজ আনা-নেওয়ার জন্য চ্যানেলে ড্রেজিংসহ পরিচর্যা, অফিশিয়াল ও অপারেশনাল কার্যক্রমে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্ব দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাকালের চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি আমরা।
সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ও নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি আমরা। ইতিমধ্যে মাতারবাড়ীতে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়াতে সক্ষম হয়েছি।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ পুরোদমে চলছে। এ বছরের শেষনাগাদ এ টার্মিনালে জাহাজ ভিড়বে আশাকরি।
বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়ায়ও অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
সব মিলে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট কার্গো-কনটেইনার পরিবহনের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান দায়িত্ব দেশের শিল্পোদ্যোক্তা, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানো। পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশীদার হতে চাই। এতে আমরা, আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা তথা জনগণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের উল্লেখযোগ্য অর্জন হচ্ছে- লয়েডস লিস্টে বিশ্বের সেরা ১০০ কনটেইনার হ্যান্ডলিং পোর্টের তালিকায় ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হওয়া, মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সৃষ্ট কনটেইনার ও জাহাজ জট নিরসন, করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, চলমান প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে করোনার বছরে (২০২০) বন্দর জেটি, আইসিটি ও আইসিটি মিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৭ টিইইউস (২০ ফুটের একক হিসেবে)। এর মধ্যে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৯১ হাজার ২২৮ টিইইউস। বাকি ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৯ টিইইউস রফতানি ও খালি কনটেইনার। ২০১৯ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস। এক বছরে কমেছে প্রায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস।
আমদানি ও রফতানি মিলে বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্য পরিবহন হয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৩ টন। এর মধ্যে আমদানি পণ্য ৭ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ টন। বাকি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩৫ টন রফতানি পণ্য। এক বছরে বন্দরে মোট জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৭২৮টি। ২০১৯ সালে বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৮০৭টি।