ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক, যাদের কঠোর শ্রমে বিশ্ব আজ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’কে চেনে।
গুটিকয়েক উদ্যোক্তা ছাড়া দেশের অধিকাংশ পোশাক শিল্প কারখানার মালিকই তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে প্রতিবারই গড়িমসি শুরু করে, বিশেষ করে মুসলমানদের দুটি বড় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এলেই এই দৃশ্য পরিষ্কার হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও গার্মেন্টস মালিকরা বিগত বছরের মতো এবারও সরকারে কাছে থেকে বড় পরিমাণে প্রণোদনা পেয়েছেন।
জানা গেছে, ঈদের মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এখনো সারাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক তাদের এপ্রিল মাসের বেতনই পাননি। মঙ্গলবার (১১ মে)এই তথ্য জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম-এর সভাপতি মোশরেফা মিশু।
মোশরেফা মিশু বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রমিকরা মৌখিকভাবে তাদের বেতন-বোনাস না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যার হার প্রায় ২০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে গাজীপুরের ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনো এপ্রিলের বেতন পাননি।
কতগুলো কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে অভিযোগগুলো আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এসেছে এগুলোর বেশিরভাগই মৌখিক অভিযোগ। ঈদের আগে যেহেতু আরো একদিন অফিস খোলা থাকবে সেক্ষেত্রে আমরা ধরে নিতে পারি হয়তো বুধবার দুপুরে মধ্যে এই বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
শ্রমিকদের বাড়তি ছুটির ব্যাপারে আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বাড়তি ছুটি তাদের ন্যায্য দাবি। কারণ ঈদের আগের অনেকেই ছুটির দিনেও কাজ করেছে। সেই হিসাবে এই ছুটি তাদের পাওনা। মালিক-শ্রমিকের সমঝোতার ভিত্তিতে বাড়তি ছুটি শ্রমিকরা নিতেই পারে।
গত ৮ মে মিরপুরের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ১০ দিনের ছুটির দাবিতে আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের মুখে সোমবার (১০ মে) মিরপুরের কালশীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকেরা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করে।
এদিকে শ্রমিকদের বেতন বোনাসের বিষয়ে বিজিএমইএ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত সময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো। যারা এখনও এপ্রিলের বেতন দেননি, আশা করা যাচ্ছে বুধবার দুপুরের আগেই তারাও শ্রমিকদের শতভাগ বেতন পরিশোধ করবেন। তবে অধিকাংশ কারখানাই শ্রমিকদের বোনাসের ৯২ শতাংশের বেশি পরিশোধ করেছে।
এদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসানকে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বুধবার (১২ মে) দুপুর ২টায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করবেন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান। সেখানে সকল বিষয় তিনি তুলে ধরবেন বলে জানায় সংগঠনটির একটি সূত্র।
সূত্রটি আরো জানায়, বিজিএমইএ-তে বর্তমানে তাদের সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯১৩টি। যার মধ্যে বেতন দিয়েছে ১ হাজার ৭০৮টি বা ৮৯ শতাংশ। বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ৭৪৬টি বা ৯২ শতাংশ কারখানা।
অপরদিকে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন-এর (বিকেএমইএ) ৯৫ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা দিয়েছে।