ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। করোনা মহামারির কারণে এ বছরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় বুধবার (২১ জুলাই) ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গতবারের মতো এ বছরও জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হবে না। তবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ঈদের দিন সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম জামাত। এরপর দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়।
সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী করবেন দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি, তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক, চতুর্থ জামাতে ইমাম থাকবেন হাফেজ মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম, সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
ঈদের জামাত নিয়ে ১২টি নির্দেশনা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে জানানো হয়-
১. মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
২. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদ বা ঈদগাহে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৩. করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধ নিশ্চিতে মসজিদ বা ঈদগাহে অজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৪. মসজিদ বা ঈদগাহের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।
৫. ঈদের জামাতে আগত মুসল্লিদেরকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৬. ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৭. শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৮. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৯. করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধ নিশ্চিতে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
১০. করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ হতে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং আমাদের কৃত অন্যায়-অপরাধের জন্য ঈদের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
১১. খতিব, ইমাম, মসজিদ বা ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১২. এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে কোরবানি দেয়া পশুর রক্ত বা বর্জ্যের কারণে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়, সে বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান।