মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আবারও দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) চারদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আরও পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস পরীমণির দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে পরী গ্রেপ্তার হবেন এমন তথ্য চার মাস আগেই জানতে পেরেছিলেন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। দেশের প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার (১১ আগস্ট) একটি জনপ্রিয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, পরীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে চার মাস আগেই অজ্ঞাত একটি ফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে খুদে বার্তাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীরে ফোনে পাঠানো হয়। খুদে বার্তায় বলা হয়, ‘পরীমণির সামনে অনেক বড় বিপদ। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মিটিং হয়েছে।’ অচেনা নম্বর থেকে এমন ম্যাসেজ পেয়ে বিচলিত চয়নিকা সেটি পরীর ফোনে ফরওয়ার্ড করেন। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
চয়নিকার ম্যাসেজের পর নড়েচড়ে বসেন তিনি। আগাম তথ্য জানতে পেরে গ্রেপ্তার এড়াতে দেন দরবার শুরু করেন নায়িকা। পরিচিতজনদের সঙ্গেও যোগাযোগে লাগাম টানেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে নতুন নম্বর চালু করেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না পরীর।
পত্রিকাটি বলছে, পরীমণিকে গ্রেপ্তারের নেপথ্যে রয়েছে তার উশৃঙ্খল জীবন। সিনেমার শুটিংয়ের আড়ালে প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে বেশি পছন্দ করতেন পরীমণি। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি। এই নায়িকা নিয়মিত ধূমপান করেন। তার বাসায় বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, দেশের সব অভিজাত ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে পরীমণির বেশ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের রেফারেন্সে তিনি বিভিন্ন ক্লাবে যাতায়াত করতেন। তারকা হোটেলের বারেও তার যাতায়াতের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও তার ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন অনেক প্রভাবশালীর নাম। যাদের কেউ কেউ পরীকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশেও ঘুরতে যান।
পরীর সঙ্গে প্রভাবশালী অনেকের ঘনিষ্ঠতা ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এই নায়িকার কারণে তাদের অনেকের দাম্পত্য জীবন বিষিয়ে উঠেছিল। এসব নিয়ে দুজন প্রভাবশালীর স্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ মহলে অভিযোগ করেন।
সম্প্রতি তিনি কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। তার অভিযোগের সূত্র ধরে বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেপ্তার হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। জামিনে মুক্ত হয়ে নাসির উদ্দিনও বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া সেই রাতের প্রকৃত ঘটনাচিত্র সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে তুলে ধরেন। এভাবেই পরীমণিকে গ্রেপ্তারের প্লট তৈরি হয়ে যায়।
সূত্র মতে, পরীকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তটি অনেক আগের। নানা কারণে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছিল। তবে বোট ক্লাবের ঘটনা আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার ব্যবস্থা করে।
এদিকে পরীর বিষয়ে সাবধান করে খুদে বার্তা পাঠানো মোবাইল নম্বরটি ঘিরে তদন্ত চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরকে মোবাইল নম্বর এবং এসএমএসগুলো দিয়েছেন পরী।
জানা যায়, সেই নম্বরটি রবি কোম্পানির। জনৈক হালিমা আক্তারের নামে নিবন্ধিত। জাতীয় পরিচয়পত্রে হালিমার মায়ের নাম ফাতেমা, বাবা হাবিজ মিয়া এবং স্বামীর নাম আক্তার হোসেন। পেশা গৃহিণী। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পশ্চিম পিপইয়াকান্দি গ্রামে তার বাড়ি।
গোয়েন্দাদের ধারণা, নম্বরটি হয়তো ভুয়া এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত। অথবা ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট কারও বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। এসএমএসদাতা নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে গৃহকর্মীর নম্বর ব্যবহার করেছেন।
জানা গেছে, পরিমণি ও মডেল পিয়াসা গ্রেপ্তারের ঘটনায় অন্তত তিনজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরইমধ্যে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।