বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে কোনো বিনিয়োগ করবে না বলে সাফ জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ যমুনা গ্রুপ। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম। এসময় তিনি জানান, যমুনা গ্রুপ নিজেরাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলবে।
বিভিন্ন সূত্রের খবর, একটি পক্ষ যমুনা গ্রুপকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। এমন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে যমুনা গ্রুপের ‘রেপুটেশন’ ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যমুনা গ্রুপ। অবশ্য এখন পর্যন্ত যমুনা গ্রুপ একটি টাকাও বিনিয়োগ করেনি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যাংক হিসাব জব্দের পরে তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব তথ্য চেয়েছে।
এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাবের তথ্য পাঠাতে হবে। ২০২০ সাল থেকে তাদের হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী, ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি জমা ও উত্তোলনের জমা রসিদ বা চেকের কপি (ওয়াক-ইন কাস্টমারের ছবিযুক্ত আইডিসহ) পাঠাতে হবে।
এসব হিসাবের নমিনির তথ্য এবং নমিনিদের নামে কোনো হিসাব থাকলে তা–ও জানাতে বলা হয়েছে। তাদের নামে এফডিআর, ঋণ হিসাব, এলসি থাকলে সব ধরনের কাগজপত্রসহ তথ্য দিতে হবে। হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, লেনদেন বিবরণী ও এ–সংশ্লিষ্ট সব ধরনের দলিল পাঠাতে হবে।
বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থা তাদের বিষয়ে তদন্ত করছে। এর অংশ হিসেবে ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এমন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে ওইদিন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, একটি দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে আমাদের পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এই বিনিয়োগ ধারাবাহিক বিনিয়োগের অংশ এবং পরবর্তী ধাপেও তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে।
যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে আমরা দেখছি যে, স্থানীয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমাজন, চীনের ক্ষেত্রে আলিবাবা। তেমনি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। শুধু দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছে। যমুনা গ্রুপ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এখন থেকে ইভ্যালি এবং যমুনা গ্রুপ সেই স্বপ্নপূরণে একে অপরের অংশীদার হলো।
ইভ্যালি ও যমুনা গ্রুপের এই অংশীদারিত্বকে স্বাগত জানিয়ে যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে যমুনা গ্রুপ ব্যবসা করে আসছে। বাংলাদেশে সব থেকে বড় অফলাইন মার্কেটপ্লেস যমুনা ফিউচার পার্ক। আর এখন সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলার জন্য ইভ্যালির সাথে থাকবে যমুনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দেশের ই-কমার্স খাতকে একটা মজবুত অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইভ্যালির সৎ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে দেশের এই করোনাকালীন দুঃসময়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।
কিন্তু যমুনা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যমুনা গ্রুপের নিজস্ব ই-কমার্স কোম্পানি উদ্বোধনের দিন ইভ্যালির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানানো হবে।