অনলাইনে বিমানের টিকিট কিনেছিলেন একাধিক যাত্রী। নির্দিষ্ট দিনে বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে ওঠার কথা তাদের। কিন্তু বোর্ডিং পাস নিতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, টিকিটের মূল্য পরিশোধ করা হয়নি! বাধ্য হয়ে তখন যাত্রার সময় পরিবর্তন করা ছাড়া পথ থাকে না তাদের।
এমন অসংখ্য যাত্রীর সঙ্গে বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসছিল ‘টোয়েন্টিফোর টিকেটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া গত ৩ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী মুসা মিয়া। তিনি ইউনিক এয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। দুই বছর ধরে টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র কাছ থেকে তিনি টিকিট সেবা নিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যুকৃত টিকিটের অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন তাদের টিকিট রিফান্ড হয়ে গেছে। পরে টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র কার্যালয়ে গেলে বন্ধ দেখা যায়। আর সেখানকার কর্মকর্তারা লাপাত্তা বলে জানতে পারে ইউনিক এয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল।
সিআইডি’র ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধানে টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৪ টাকা মানিলন্ডারিং করে আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলার তদন্ত চলছে। তারা কীভাবে ও কোথায় মানিলন্ডারিং করেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।”
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণা মামলায় ইতোমধ্যে তানভীর নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, টোয়েন্টিফোর টিকেটি অনলাইনে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট কম দামে বিক্রির অফার দিতো। তাদের অফারে প্রলুব্ধ হয়ে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি নিজেদের গ্রাহকদের টিকিট টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র মাধ্যমে করাতো। প্রতিষ্ঠানটি কিছু টিকিট ইস্যু করলেও মাঝে মধ্যে কারিগরি সমস্যা দেখিয়ে টিকিট বাতিল করেছে। এভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে এর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কম দামের অফার দিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট, আল রাজি, টেলন, সানজার এভিয়েশন ইত্যাদির মাধ্যমে টিকিট কিনতো টোয়েন্টিফোর টিকেটি। এর কর্মকর্তারা লাপাত্তা হওয়ার খবর জানতে পেরে ওইসব প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের সব টিকিট রিফান্ড করে দিয়েছে। তারা টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা বলে একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সিআইডি’র তথ্যানুযায়ী, টোয়েন্টিফোর টিকেটি’র চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে ভাইবোন। তাদের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানাধীন হাসাদাহ বাজার এলাকায়। ভাইবোনের প্রতারকচক্রের সঙ্গে পরিচালক হিসেবে এম মিজানুর রহমান সোহেল নামের একজন সাংবাদিকসহ সিলেটের বাসিন্দা প্রদ্যোত বরণ চৌধুরী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসাদুল ইসলাম জড়িত।
সূত্র জানায়, নাসরিন ও রাজ্জাক বাদে বাকিরা টোয়েন্টিফোর টিকেটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা পরস্পর যোগসাজশে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ইউনিক এয়ার ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মুসা মিয়া বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন, সেখানে এই পাঁচজন ছাড়াও রাকিবুল হাসান নামে আরেক আসামি আছে। সোমবার (৪ অক্টোবর) রাকিবুলকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।